লাইফস্টাইল ডেস্ক: উত্তরবঙ্গে নিজ জেলা শহর হওয়ায়, প্রতিবারই সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে যাওয়া লেগেছে। সিরাজগঞ্জ হলো যমুনা সেতু পরবর্তী সময়ে উত্তরবঙ্গের ট্রানজিট। সেতু পূর্ববর্তী সময়েও সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে যাতায়াত করা লাগত। তবে তাতে সময় লাগত অধিক।
গত অক্টোবরে হুট করে মাথায় ভ্রমণের ভূত চেপে বসল। ভাবলাম সিরাজগঞ্জ ঘুরে আসলে কেমন হয়? যদিওবা সিরাজগঞ্জের চেয়ে হাইওয়ে ফটোশ্যুটের দিকে মন পড়েছিল বেশি।
তাই ভেবে অক্টোবরের মাঝামাঝি এক শনিবারে ছুটি থাকায়, সকাল সকাল রওনা দিলাম সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে। ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের সরাসরি বাস সার্ভিস আহামরি ভালো না থাকায় ভাবলাম রাজশাহীর বাসে চড়ে সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদ কিংবা কড্ডার মোড়ে নেমে যাব।
গ্রামীণ ট্রাভেলসের সকাল ৮টা ৩০মিনিটের ট্রিপে উঠলাম। গাড়ির চাকা পাংচার হওয়াতে যমুনা সেতুর পশ্চিমপাড় সংলগ্ন সায়দাবাদ পৌঁছাতেই বেজে গেল প্রায় ১২টা ৩০মিনিট।
কিছুক্ষণ হাইওয়ে ফটোশ্যুট শেষে দেখলাম চেহারা, চুলে ধুলো মেখে শেষ। এরপর একটি ভ্যানে চড়ে চলে গেলাম বেলকুচি এনায়েতপুর সংযোগ সড়কে। সেখানে এক হোটেলে ফ্রেশ হয়ে ভাবলাম কিছু খেয়ে নিই। তবে সেখানে খাবারের পরিবেশ খুব একটা ভালো না থাকায়, লোকাল বাসে করে চলে যাই কড্ডার মোড় নামক স্থানে।
কড্ডা থেকে সিরাজগঞ্জ শহরের দূরত্ব প্রায় ১০/১৫ কিলোমিটারের মতো হবে। সঙ্গে আরও কয়েকজন থাকায় ভাবলাম ব্যাটারিচালিত অটো রিজার্ভ নিয়ে নিলে ভালো হয়। প্রকৃতি দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে।
সে সময়ে কড্ডা–সিরাজগঞ্জ বাজার রোড নির্মাণাধীন থাকায়, যাত্রা খুব একটা সুখকর হয়নি বলা চলে।
লোকমুখে শোনা যে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া এই তিন জেলার সংস্কৃতি কিছুটা কাছাকাছি হওয়ায় খাবারে গরুর মাংসের আধিক্য থাকবে! তাই সেই গরুর মাংস খাবার আশা নিয়ে ক্ষুধাভরা পেট নিয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে আসা।
শহর তথা সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে নামতেই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। তাই তৎক্ষণাৎ আশ্রয়ের জন্যে ঢুকে পড়লাম একটি স্যালুনে। আর দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখলাম ফলের রসের দোকানগুলো।
নানান পদের ফলের পসরা সাজিয়ে এবং একটি ব্লেন্ডার নিয়ে দোকানিরা শরবত বিক্রি করছেন। তবে ক্ষুধা নষ্ট করতে চাইনি বিধায় সেসব ফলের রস খাবার ইচ্ছে থাকলেও আর হাত বাড়াইনি সেদিকে।
বৃষ্টি মোটামুটি কমলে পায়ে হেঁটেই চলে এলাম সিরাজগঞ্জ মূল শহরে। শহরের দোকানপাটের গলিগুলো দেখে মনে হলো, যেন কিছুটা ঢাকার নিউমার্কেটের সাথে মিলে যায়। ছোট ছোট মাঝারি সাইজের গলি।
ক্ষুধায় পেটের অবস্থা খারাপ এ দিকে। তাই দেরি না করে ঢুকে পড়লাম নাম না জানা সিরাজগঞ্জের কথিত এক বিখ্যাত ভাতের হোটেলে। গিয়ে দেখি গরুর মাংস শেষ, মনে একরাশ হতাশা জন্মাল তখন। অগত্যা মুরগির ঠ্যাং কামড়াতে কামড়াতে ভাত খেতে হলো, সঙ্গে ছিল বাদাম ভর্তা, ডাল ও সবজি।
বাদাম ভর্তা দেখলাম এই এলাকায় বেশ জনপ্রিয় খাবার। কিছুটা মজাদার ছিল বটে! এরপর মিষ্টি কিছু হতে হাজির হলাম এক মিষ্টির দোকানে। আস্ত চমচম খেলার আর সেই দোকানেই খেলাম চা।
এরপর হাঁটতে শুরু করলাম। বৃষ্টি হওয়ায় পর রিকশা পাওয়া দুস্কর ছিল। কিছুদূর এগুতেই পেলাম রিকশা, গন্তব্য ঢাকা ফেরার বাসস্ট্যান্ড। হুট করে মনে পড়ল যে সিরাজগঞ্জে ‘চায়না বাঁধ’ নামক এক জায়গা আছে, সেখানে গেলে কেমন হয়?
যেই ভাবা সেই কাজ, রিকশা ঘুরিয়ে চলে গেলাম সেখানে। ‘চায়না বাঁধ’ আসলে স্থানীয় মানুষের দেওয়া নাম। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নাম দেয় ‘সিরাজগঞ্জ ক্রসবার’ কিংবা সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ।
বেশ কয়েকটি ক্রসবার আছে এই শহরে। এর মধ্যে আমরা গেলাম একটিতে।
সেখানে যাবার পর জায়গার পরিবেশ দেখে খুবই মুগ্ধ হই। বড় বড় টার্বাইন, কিছু দূরেই যমুনা সেতু দেখা যাচ্ছে। বাস, ট্রাক চলছে আরও কত কি। তখন ভরা মৌসুম থাকায় যমুনার পানি ছিল বেশ খানিকটা। নৌকা, ট্রলারগুলো এ দিক সে দিক চলাচল করছিল।
এরপর সন্ধ্যা নেমে আসল দেখতে দেখতে। এবার ফেরার পালা।
রিকশাযোগে চলে এলাম সিরাজগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে গন্তব্য হাটিকুমড়ুল এলাকার ‘ফুড ভিলেজ প্লাস’ নামক হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট। সেখানে পৌঁছে ঢাকা ফেরার বাস পেতে পড়লাম বিপাকে, কেননা শনিবার সন্ধ্যা ছিল। নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া প্রভৃতি জেলা থেকে বাসগুলো আসছিল ফুল বুক নিয়েই।
পরে কোনোরকমে মহাখালী–আব্দুল্লাহপুরগামী একতা ট্রান্সপোর্টের একটি বাসে করে চলে আসি ঢাকা।
কেউ যদি দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার জন্যে কোথাও ঘুরতে যেতে চান, তাহলে সিরাজগঞ্জ হতে পারে আপনার জন্যে অন্যতম সেরা পছন্দ।
লেখক- আকিব চৌধুরী।